"ভ্রমরারে! কি মনে করি আইলে প্রাণ নলিনী ভবনে।
একি অপরূপ, সরোজে সদউ, নিদয় কেতকী কাননে।
ত্যজিয়ে এমন সুখ, দুখে আগমন, বুঝিতে না পারি নাথ, কহ কি কারণ।
অধিনীজনে কি পড়িয়াছে মনে, কি ভ্রমে আইলে এখানে।
দেখহ তপন সখা জগতে বিদিত, হেরি হই বিকসিত, থাকিলে মুদিত।
তাহার কিরণ, শেষে দহে প্রাণ, না হয় শীতল জীবনে।।"
বাংলা টপ্পার আদি পুরুষ কালী মীর্জা। ১৭৮০-৮১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি সঙ্গীত শিক্ষা শেষে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি হুগলিতে এসে বসবাস শুরু করেন। এখানেই তিনি বাংলা টপ্পা গানের চর্চা শুরু করেন। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক ছিলেন। তিনি নিধুবাবুর অনেক আগে থেকে বাংলা টপ্পার প্রচলন করেন। উল্লেখ্য, ছাপরা থেকে কলকাতায় ফিরে নিধুবাবু বাংলা টপ্পা শুরু করেন ১৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দে। সময়ের নিরিখে বাংলা টপ্পার আদি পুরুষ বলতে কালী মির্জাকে বিবেচনা করা হয়।
বাংলা টপ্পা জলপ্রিয়তা লাভ করেছিল রামনিধি গুপ্ত তথা নিধুবাবু'র সূত্রে। ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সরকারী রাজস্ব আদায় বিভাগে চাকরি লাভ করেন। এই বৎসরেই তিনি বিহারের ছাপরা জেলার কালেক্টর অফিসে দ্বিতীয় কেরানি হিসেবে কাজ শুরু করেন। ছাপরাতে তিনি প্রথম তিনি এক ওস্তাদের কাছে রাগ সঙ্গীতের তালিম নেওয়া শুরু করেন। পরে ছাপরা জেলার রতনপুরা গ্রামের ভিখন রামস্বামীর মন্ত্র শিষ্য হন। এই সময় তিনি উত্তরভারতের বিভিন্ন ধরনের গানের সাথে পরিচিত হয়ে উঠেন এবং বিভিন্ন সঙ্গীতশিল্পীদের কাছে রাগ সঙ্গীত শেখেন। এই সময় লক্ষ্ণৌ অঞ্চলে শোরী মিঞা'র টপ্পা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। বিভিন্ন শিল্পীদের মাধ্যমে তিনি সম্ভবত ওই টপ্পার সাথেও তাঁর পরিচয় ঘটেছিল। ১৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ছাপরা থেকে কলকাতায় ফিরে আসেন। কলকাতায় ফিরে তিনি শোভাবাজারে একটি আটচালা ঘরে সঙ্গীতের বসানো শুরু করেন। এই ঘরে প্রতিরাত্রে নিধুবাবু'র গানের আসর বসতো। এই আসরেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে টপ্পার সূচনা করেন তিনি। পরে এই আসরের আয়োজন হতো বাগবাজারের রসিকচাঁদ গোস্বামীর বাড়িতে। এই সকল আসরের ভিতর দিয়ে রামনিধি গুপ্ত-এর গান হয়ে যায় নিধুবাবু'র গান বা নিধুবাবু'র টপ্পা।
কালী মীর্জা এবং নিধুবাবুর পরে বাংলা টপ্পাকে সচল রাখেন শ্রীধর কথক। শ্রীধর সযত্নে কালী মীর্জা এবং নিধুবাবুর টপ্পাকে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে তাঁর গানে নিধুবাবুর প্রভাবই বেশি। এরপর পশ্চিমা টপ্পা শিখে বাংলা টপ্পার জগতে আসেন মহেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। সঙ্গীতে তাঁর অসাধারণ দখলের কারণে তিনি মহেশ ওস্তাদ নামে খ্যত হয়েছিলেন। মহেশচন্দ্র ১৮৫০-১৯০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তাঁর বাংলা টপ্পাকে সজীব করে রেখেছিলেন। এরপরে শ্রী রামকুমার চট্টোপাধ্য়ায় (১৯২১-২০০৯) ছিলেন টপ্পা সঙ্গীতের শেষ জনপ্রিয় গায়ক।
উত্তর ভারতীয় সঙ্গীতে অর্ধ-শাস্ত্রীয় সঙ্গীত হিসেবে টপ্পা একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। সংস্কৃত লম্ফ শব্দ রূঢ়ারার্থে হিন্দুস্থানি সঙ্গীত গৃহীত হয়েছিল। এর অর্থ সংক্ষেপ্ত। খেয়াল বা ধ্রুপদের সংক্ষিপ্তরূপ হিসেবে হিন্দিতে 'টপা' শব্দ গৃহীত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এই শব্দটি দাঁড়ায় টপ্পা।
টপ্পার স্বাভাবিক করুণ রস, প্রেম, প্রধানত বিরহকে বিষয়বস্ত্ত করে রচিত বলে টপ্পার উপযোগী কিছু বিশেষ রাগও আছে, যেমন - ভৈরবী, খাম্বাজ, দেশ, সিন্ধু, কালাংড়া, ঝিঁঝিট, পিলু, বারোয়া প্রভৃতি। নিধুবাবু-রচিত গানে বিরহের প্রকাশ কত মার্জিত, পরিশীলিত; একটি গানের উদাহরণ দিলে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে – >>বিধি দিলে যদি বিরহ যাতনা প্রেম গেল কেন প্রাণ গেল না হইয়ে বহিয়ে গেছে প্রেম ফুরায়েছে রহিল কেবলি প্রেমেরি নিশানা।<<
অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে পাঞ্জাব অঞ্চলের লোকগীতি টপ্পা গানের প্রচলন শুরু হয়। প্রধানত উটের গাড়ি চালকের মুখেই টপ্পা গান বেশি শোনা যেত। শোরী মিয়া (১৭৪২-১৭৯২) নামে একজন সঙ্গীতজ্ঞ টপ্পা গানগুলোকে সাঙ্গিতিক আদর্শে সাজিয়ে সম্পূর্ণ আলাদা একটি গায়ন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে রামনিধি গুপ্ত বা নিধু বাবু (১৭৪১-১৮৩৯) বাংলা টপ্পা রচনা করেন। এখানেই ভারতীয় বা হিন্দুস্থানী রাগসঙ্গীতের ধারার সঙ্গে বাংলা রাগসঙ্গীত চর্চা যুক্ত হয়। পরবর্তীতে টপ্পাকার কালীমির্জা (১৭৫০-১৮২০), বাংলা ভাষায় ধ্রুপদ রীতির প্রবর্তক রামশংকর ভট্টাচার্য (১৭৬১-১৮৫৩) এবং বাংলা ভাষায় খেয়াল রচয়িতা রঘুনাথ রায় (১৭৫০-১৮৩৬) বাংলা গানকে আরও সমৃদ্ধ করে হিন্দুস্থানী রাগসঙ্গীতের ধারার সঙ্গে যুক্ত করেন। টপ্পার উৎপত্তি কখন এবং কিভাবে শুরু হয়েছিল, তা নিয়ে নানা রকমের গল্প আছে। A.F. Strangways তাঁর Music of India গ্রন্থে– পাঞ্জাবের উট চালকদের লোকগান থেকে টপ্পার উৎপত্তি। কিন্তু অনেকেই এই কথা মানতে রাজি নন। তবে আদি টপ্পাতে পাঞ্জাবি ভাষার আধিক্য রয়েছে। এই বিচারে বলা যায়, পাঞ্জাবের লোকগীতি থেকে এই গানের সূত্রপাত ঘটেছিল। হয়তো অন্যান্য পেশার মানুষের সাথে উটচালকরা এই গান গাইতেন। কাপ্তেন উইলার্ভকে উদ্ধৃতিকে অনুসরণ করে রাজ্যেশ্বর মিত্র তাঁর বাংলার গীতিকার ও বাংলা গানের নানা দিক গ্রন্থের টপ্পার উৎস সম্পর্কে লিখেছেন– ‘টপ্পা ছিল রাজপুতনার উষ্ট্র চালকদের গীত। শোনা যায়, মধ্যপ্রাচ্য থেকে যেসব বণিক উটের পিঠে চেপে বাণিজ্য করতে আসত, তারা সারারাত নিম্নস্বরে টপ্পার মতো একপ্রকার গান গাইতে গাইতে আসত। তাদের গানের দানাদার তানকেই বলা হতো ‘জমজমা’। আসলে জমজমা শব্দে ‘দলবদ্ধ উষ্ট্র’ বোঝায়। সাধারণভাব উষ্ট্রবিহারিদের গানও এই শব্দের আওতায় এসে গেছে। লাহোরে উট বদল হতো। এই লাহোর থেকেই টপ্পার চলটি ভারতীয় সংগীতে অনুপ্রবিষ্ট হয়েছে।’
নিধুগুপ্তঃ-
(১৭৪১-১৮৩৯) সঙ্গীতশিল্পী ও গানের জনক। তাঁর প্রকৃত নাম ‘রামনিধি গুপ্ত’,
কিন্তু সঙ্গীতজগতে তিনি ‘নিধু গুপ্ত’ নামেই পরিচিত। কেউ কেউ তাঁকে
‘নিধুবাবু’ বলেও ডাকতেন। হুগলি জেলার চাপ্তায় মাতুলালয়ে
তাঁর জন্ম। পিতা হরিনারায়ণ গুপ্ত পেশায় ছিলেন একজন কবিরাজ এবং তিনি
কলকাতার কুমারটুলিতে সপরিবারে বাস করতেন।
নিধু গুপ্ত জনৈক পাদরির নিকট কিছু ইংরেজি শিক্ষার সুবাদে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসে কেরানির চাকরি পান। এ উপলক্ষে তিনি ১৭৭৬ থেকে ১৭৯৪ সাল পর্যন্ত বিহারের ছাপরায় অবস্থান করেন। সেখানে একজন মুসলমান ওস্তাদের নিকট তিনি হিন্দুস্থানি টপ্পা সঙ্গীতে তালিম নেন। কোম্পানির অফিসে চাকরি করে তিনি প্রচুর অর্থের মালিক হন এবং কলকাতায় ফিরে সম্পূর্ণরূপে সঙ্গীতচর্চায় মনোনিবেশ করেন। ১৮০৮ সালে তিনি শোভাবাজারে একটি সঙ্গীত সমাজ প্রতিষ্ঠা করে তরুণদের সঙ্গীত শিক্ষা দেন।
নিধু গুপ্ত বাংলা ভাষায় টপ্পাগীতি রচনা ও সুরারোপ করে নিজেই তা গাইতেন। ক্রমে তাঁর গানের সমঝদার জোটে এবং কলকাতার নগরসমাজে তিনি অল্পদিনেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বর্ধমানের মহারাজা তেজেশচন্দ্র রায়বাহাদুর তাঁর গানের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন।
টপ্পা প্রধানত মার্গরীতির প্রণয়গীতি; ধ্রুপদ-খেয়ালের চেয়েও সংক্ষিপ্ত আঙ্গিকে কেবল অস্থায়ী ও অন্তরা সমন্বয়ে রচিত। নিধু গুপ্ত হিন্দি টপ্পার অনুকরণে বাংলা টপ্পা রচনা করেন, তবে তাতে তাঁর স্বকীয়তা ফুটে উঠেছে। তিনি বিভিন্ন রাগের মিশ্রণ ঘটিয়ে সুরের মধ্যে বৈচিত্র্য এনেছেন। টপ্পার গায়ন-পদ্ধতি এমনই যে, এর সুরের ভাঁজে ভাঁজে গায়কের ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে। টপ্পায় বাণীর চেয়ে রাগের কাজ বেশি। এর আলাপি ধরনের সুর শ্রোতার মনে মাদকতা আনে। টপ্পাগানে আদিরসের স্থান থাকলেও নিধু গুপ্ত বিশুদ্ধ মানবীয় প্রেমের গান রচনা করেন। তিনি মাতুল সম্পর্কীয় আত্মীয় কুলুইচন্দ্রের আখড়াই গান সংশোধন করে দিতেন এবং এ গানের উন্নতিসাধনে যথেষ্ট চেষ্টাও করেন।
আখড়াই গান আদিরসাত্মক। নিধু গুপ্তের ভালোবাসার পাত্রী ছিল শ্রীমতী নামে এক রূপবতী ও সঙ্গীতনিপুণা বারাঙ্গনা। তিনি শ্রীমতীর গৃহে উপস্থিত হয়ে তাকে গান শোনাতেন এবং তার সান্নিধ্য উপভোগ করতেন। তাঁর প্রেমমূলক অনেক টপ্পার প্রেরণার মূলে ছিল এই প্রণয়পাত্রী।
স্বভাবকবির প্রতিভাগুণে নিধু গুপ্তের অনেক গান আধুনিক বাংলা লিরিকের বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হয়েছে। ১৮৩২ সালে গীতরত্ন নামে তাঁর গানের একটি সংকলন প্রকাশিত হয়; তাতে ৯৬টি গান স্থান পায়। তাঁর পুত্র জয়গোপাল গুপ্ত ১৮৫৬ সালে এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেন; তাতে আরও সাতটি গান সংযুক্ত হয়। গীতরত্নের গানগুলির মধ্যে চারটি ভক্তিভাব ও একটি স্বদেশচেতনার গান ছাড়া বাকি ৯৮টি প্রেমবিষয়ক গান। দুর্গাদাস লাহিড়ী সম্পাদিত বাঙ্গালীর গানে (১৯০৫) নিধু গুপ্তের ৪৫০টি এবং সঙ্গীতরাগকল্পদ্রুম নামক সংকলনে ১৫০টি গান মুদ্রিত হয়েছে।
নিধু গুপ্ত বাংলা ভাষাবিষয়ক একটি গান রচনা করে স্বদেশপ্রেম ও ভাষাপ্রীতির স্বাক্ষর রেখেছেন। গানটি হলো: ‘নানান দেশের নানান ভাষা/ বিনে স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা\’ সেকালের প্রেক্ষাপটে এরূপ উক্তি দুর্লভ বলেই বিবেচিত হয়। ‘মনোপুর হোতে আমার হারায়েছে মন’, ‘কত ভালবাসি তারে সই, কেমনে বুঝাব’, কেমনে রহিব ঘরে মন মানে না’, ‘এমন সুখের নিশি কেন পোহাইল’ ইত্যাদি তাঁর কয়েকটি জনপ্রিয় টপ্পা গান।
নিধু গুপ্ত জনৈক পাদরির নিকট কিছু ইংরেজি শিক্ষার সুবাদে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসে কেরানির চাকরি পান। এ উপলক্ষে তিনি ১৭৭৬ থেকে ১৭৯৪ সাল পর্যন্ত বিহারের ছাপরায় অবস্থান করেন। সেখানে একজন মুসলমান ওস্তাদের নিকট তিনি হিন্দুস্থানি টপ্পা সঙ্গীতে তালিম নেন। কোম্পানির অফিসে চাকরি করে তিনি প্রচুর অর্থের মালিক হন এবং কলকাতায় ফিরে সম্পূর্ণরূপে সঙ্গীতচর্চায় মনোনিবেশ করেন। ১৮০৮ সালে তিনি শোভাবাজারে একটি সঙ্গীত সমাজ প্রতিষ্ঠা করে তরুণদের সঙ্গীত শিক্ষা দেন।
নিধু গুপ্ত বাংলা ভাষায় টপ্পাগীতি রচনা ও সুরারোপ করে নিজেই তা গাইতেন। ক্রমে তাঁর গানের সমঝদার জোটে এবং কলকাতার নগরসমাজে তিনি অল্পদিনেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বর্ধমানের মহারাজা তেজেশচন্দ্র রায়বাহাদুর তাঁর গানের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন।
টপ্পা প্রধানত মার্গরীতির প্রণয়গীতি; ধ্রুপদ-খেয়ালের চেয়েও সংক্ষিপ্ত আঙ্গিকে কেবল অস্থায়ী ও অন্তরা সমন্বয়ে রচিত। নিধু গুপ্ত হিন্দি টপ্পার অনুকরণে বাংলা টপ্পা রচনা করেন, তবে তাতে তাঁর স্বকীয়তা ফুটে উঠেছে। তিনি বিভিন্ন রাগের মিশ্রণ ঘটিয়ে সুরের মধ্যে বৈচিত্র্য এনেছেন। টপ্পার গায়ন-পদ্ধতি এমনই যে, এর সুরের ভাঁজে ভাঁজে গায়কের ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে। টপ্পায় বাণীর চেয়ে রাগের কাজ বেশি। এর আলাপি ধরনের সুর শ্রোতার মনে মাদকতা আনে। টপ্পাগানে আদিরসের স্থান থাকলেও নিধু গুপ্ত বিশুদ্ধ মানবীয় প্রেমের গান রচনা করেন। তিনি মাতুল সম্পর্কীয় আত্মীয় কুলুইচন্দ্রের আখড়াই গান সংশোধন করে দিতেন এবং এ গানের উন্নতিসাধনে যথেষ্ট চেষ্টাও করেন।
আখড়াই গান আদিরসাত্মক। নিধু গুপ্তের ভালোবাসার পাত্রী ছিল শ্রীমতী নামে এক রূপবতী ও সঙ্গীতনিপুণা বারাঙ্গনা। তিনি শ্রীমতীর গৃহে উপস্থিত হয়ে তাকে গান শোনাতেন এবং তার সান্নিধ্য উপভোগ করতেন। তাঁর প্রেমমূলক অনেক টপ্পার প্রেরণার মূলে ছিল এই প্রণয়পাত্রী।
স্বভাবকবির প্রতিভাগুণে নিধু গুপ্তের অনেক গান আধুনিক বাংলা লিরিকের বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হয়েছে। ১৮৩২ সালে গীতরত্ন নামে তাঁর গানের একটি সংকলন প্রকাশিত হয়; তাতে ৯৬টি গান স্থান পায়। তাঁর পুত্র জয়গোপাল গুপ্ত ১৮৫৬ সালে এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেন; তাতে আরও সাতটি গান সংযুক্ত হয়। গীতরত্নের গানগুলির মধ্যে চারটি ভক্তিভাব ও একটি স্বদেশচেতনার গান ছাড়া বাকি ৯৮টি প্রেমবিষয়ক গান। দুর্গাদাস লাহিড়ী সম্পাদিত বাঙ্গালীর গানে (১৯০৫) নিধু গুপ্তের ৪৫০টি এবং সঙ্গীতরাগকল্পদ্রুম নামক সংকলনে ১৫০টি গান মুদ্রিত হয়েছে।
নিধু গুপ্ত বাংলা ভাষাবিষয়ক একটি গান রচনা করে স্বদেশপ্রেম ও ভাষাপ্রীতির স্বাক্ষর রেখেছেন। গানটি হলো: ‘নানান দেশের নানান ভাষা/ বিনে স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা\’ সেকালের প্রেক্ষাপটে এরূপ উক্তি দুর্লভ বলেই বিবেচিত হয়। ‘মনোপুর হোতে আমার হারায়েছে মন’, ‘কত ভালবাসি তারে সই, কেমনে বুঝাব’, কেমনে রহিব ঘরে মন মানে না’, ‘এমন সুখের নিশি কেন পোহাইল’ ইত্যাদি তাঁর কয়েকটি জনপ্রিয় টপ্পা গান।
তথ্য সহায়তা ঃ- গুগল
No comments:
Post a Comment