"যখন দেবীর সম্মুখে বলির সকর্দম রক্ত সর্বাঙ্গে মাখিয়া সকলে উত্কট চিত্কারে ভীষণ উল্লাসে প্রাঙ্গণে নৃত্য করিতে থাকে তখন কি তাহারা মায়ের পূজা করে, না নিজেদের হৃদয়ের মধ্যে যে হিংসারাক্ষাসী আছে সেই রাক্ষসীটারই পূজা করে " --------রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ধর্মের নাম নরবলি আগে
হত।কিন্তু নরবলি বে-আইনি ঘোষিত হওয়ার পর, বিশেষত নরবলি দিলে অপরাধীর
ফাঁসি পর্যন্ত হতে পারে এই বার্তা পৌছে যাওয়ার পর নরবলি বন্ধ হয়ে
গেছে। যে কোনো ধরনের পাশুবলিই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বলি এক
অমানবিক নিষ্ঠুর প্রথা। নরবলি থেকে পশুবলি সব ক্ষেত্রেই অপরকে মেরে নিজেকে
সুখী করার প্রবনতা, যা সমাজবাদ্ধ মানবপ্রজাতির অগ্রগতির বিরোধী। এরই
সঙ্গে চলে বলির সংখ্যা বাড়িয়ে পাল্লা দেওয়ার রেষারেষির প্রবনতা।
হুগলী জেলার বলাগড় থানার শ্রীপুর গ্রামের রাস উৎসব হিন্দু ধর্মের শাক্ত,শৈব ও বৈষ্ণব ধারার মিলনক্ষত্র। আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগে রঘুনন্দন মিত্রমুস্তাফী নদীয়া জেলার উলা-বীরনগর থেকে এসে শ্রীপুরে জমিদারির পত্তন করেন। তিনি একটি গড়বিশিষ্ট এলাকায় প্রাসাদ,মন্দিররাজি,চণ্ডীমণ্ডপ ইত্যাদি গড়ে তোলেন।
রঘুনন্দন ছিলেন বৈষ্ণব, গড়ের চত্বরের মধ্যেজোড়াশিল্পের পঞ্চরত্ন মন্দির আছে,শিখরগুলি রেখ ধরণের খাঁজকাটা,আর সামনের ভাগের মাটির ফলকের ওপর উদ্ভিদধর্মী কারুকাজ।এ ছাড়া ওই গড় এলাকার মধ্যেই একটি আটচালা শিবমন্দির,দোলমঞ্চ ও রাধাগোবিন্দ মন্দির আছে। গড় এলাকার বাইরে রাস্তার ওপর একটি আটচালা শিবমন্দির,বিন্ধ্যাবাসিনী দেবীর পুজোরর দালান এবং একটি খিলানস্তম্ভে তৈরী রাসমঞ্চ আছে।
চণ্ডীমণ্ডপটির নির্মাণ সময় ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ। পঞ্চরত্ন মন্দিরটি ও অন্যান্য মন্দিরগুলি ঊনবিংশ শতকে নির্মিত। শ্রীপুরের গোবিন্দ মন্দিরটি একচূড়া বিশিষ্ট,১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে নিধিরাম মুস্তাফি এটি নির্মাণ করেন। আর মন্দিরের সামনের দোলমঞ্চটি ১৭৪৬ খ্রিস্টাব্দে রুদ্ররাম মুস্তাফি নির্মাণ করিয়েছিলেন।
রাস পূর্ণিমায় শ্রীপুর গ্রামে সপ্তাহব্যাপী চলে রাসমেলা ,বস্তুত এটাই গ্রামের মূল অনুষ্ঠান। আগেই বলছি এই মেলা শাক্ত বৈষ্ণব ও শৈব ধারার এক মিলনমেলা। একাধারে রাধাকৃষ্ণের রাস ,বিন্দুবাসিনী দেবীর পূজা ও বিন্দুবাসিনী দেবীর সাথে মহাদেবের বিবাহানুষ্ঠান এই সব মিলে মেলা জমজমাট।
এই উপলক্ষ্যে সারাদিন ধরে চলে যাত্রানুষ্ঠান,নাটক,আতশবাজির প্রদর্শনী আরও অনেক অনুষ্ঠান।
এত সুন্দর জমজমাট অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে একটি নৃশংস অধ্যায়, পশুবলি। দীর্ঘদিন ধরে এখানে ভেড়া ছাগল ও মোষবলির মত নৃশংস প্রথা চালু রয়েছে। আমার ধারণা সব ধর্মেই ধর্মের মোড়কে নৃশংসতা সৃষ্টি হয়েছিল একটা সাধু উদ্দেশ্য নিয়ে,(অবশ্য এটা আমার নিজস্ব ব্যাখ্যা,আমি পন্ডিত নই ,ধর্ম সম্পর্কে বিশেষ কিছু বুঝিও না , আমি আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে যতটুকু বুঝি,তাই বলার চেষ্টা করি ) একসময় বিরাট সংখক মানুষ আর্থিকভাবে অনুন্যত ছিল,রাজা বা ধনী মানুষের পৃষ্ঠপোষকতায় পশুদের বলি বা কুরবানী করে তার মাংস এই দরিদ্র শ্রেণীর বিতরণ করা হতো। শ্রীপুরে জমিদার রঘুনন্দনের ব্যাবস্থাপনায় তাঁর দরিদ্র প্রজাদের জন্য ভেড়া ও ছাগলবলি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রজাদের জন্য মোষ বলি প্রথা চালু করা হয়েছিল। রঘুনন্দন মিত্রমুস্তাফির সময় থেকে আমরা ৩০০ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে এসেছি , বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতিতে এত সুন্দর একটা অনুষ্ঠানে মোষ বলি বা পশুবলির মতো পৈশাচিক,মানবতা বিরোধী একটা প্রথা চালু রাখার কোনো যুক্তি আমি খুঁজে পাইনা।
অনেকের ধারনা আছে ধর্মীয় কারনে বলি দিলে মানসিক শক্তির বিকাশ হয়। অথচ পুজোর নাম নৃশংস এই প্রথা কোন ভাবেই মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে না। দুর্বল ও অবলা প্রানীদের যে নৃশংসতার সঙ্গে হত্যা করা হয় তাতে 'খুনি' মানসিকতার জন্ম হয়।মনোবিজ্ঞানীদের এবং মনোরোগ চিকিৎসকদের মতে বলির ভয়ানক দৃশ্য শিশুমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে। এর থেকে নানারকম মানসিক রোগ, ভীতি নিদ্রাহীনতা হাতে পারে।
মানুষের একমাত্র ধর্ম হলো মানবধর্ম, আর মানবধর্মের মূলকথাই হলো মানবতা(Humanity )।
ধর্মের নাম করে এই নৃশংসতা ,যা মানুষকে পীড়া দেয়, দৃশ্য দুষণ ঘটায় ও শিশুমনে বিকৃতির জন্ম দেয় , এমন কাজ কখনোই 'ধর্ম 'হতে পারে না। পাবলিক নুইসেন্স এক্ট (Public Nuisance Act) বা সংবিধানের ২৬ নং ধারা অনুযায়ী সব মানুষের দাবি হওয়া উচিত এই প্রথ বন্ধ করা।
অনেকের মানে প্রশ্ন জগতে পারে আমরা কি তাহলে মাংস খাবোনা ? বলি সংক্রান্ত আগের আমার একটি পোস্ট এ আমি বলেছিলাম পরিবেশের ইকোসিস্টেম অনুযায়ী পৃথিবীর নিয়মই হচ্ছে খাদ্য খাদকের ,তৃণভোজী মাংসাশী কেউই এই নিয়মের বাইরে নয় . এইক্ষেত্রে বলে রাখি একটি গাছ ও কিন্তু একটি প্রাণ . জীবনধারণের জন্য খাদ্য খাদকের সম্পর্ক আর ধর্মের নাম করে নৃসংশ প্রাণীহত্যা ,....... এই দুটোর প্রেক্ষিত আলাদা . যে কোনো ধর্মেরই মূল কথা হলো ,মানবতা,ত্যাগ,উদারতা ,সমবেদনা ,ইত্যাদি . এই নৃশংসতা কোনো ধর্মানুরাগ হতে পারে না ..........
ইকো-সিস্টেম অনুযায়ী , খাদ্য-খাদক সম্পর্কের ভিত্তিতে অবশ্যই আমরা মাংস খেতে পারি। আমরা মাংসের দোকান থেকে মাংস কিনে খাই আমাদের শরীরের চাহিদা মেটাবার জন্য।
বলি শব্দের প্রকৃত অর্থ পূজা-উপহার। এ ছাড়া প্রামান্য অভিধানে এর অর্থ আছে কর, উপহার ইত্যাদি। পশুবধ কথাটি পরবর্তীকালে এসেছে। 'বলি' শব্দের উত্পত্তি বল-ধাতু থেকে। অর্থ- জীবন, বেষ্টন, সমৃদ্ধি, দান। এ ছাড়া বল-ধাতুর যে হিংসা ও বধ অর্থ আছে, তার মানেও জীবন ও বৃদ্ধিতে যা' হানি আনে তাকে হিংসা করা, তাকে বধ করা।কিন্তু আমরা মানুষ, তাঁর সৃষ্ট শ্রেষ্ঠ জীব হয়েও প্রবৃত্তির তাড়নায় অনেকেই তাঁরই সৃষ্ট দুর্বল জীবকে হত্যা করে নিজের রসনাকে পরিতৃপ্ত করতে চাই। জগন্মাতার চরণে তাঁর সন্তানকেই বলি দিয়ে তাঁর পূজা করতে চাই। মা কি নিজ সন্তানের রক্ত পান করে পরিতৃপ্ত হন ? না, আমাদের রসনার পরিতৃপ্তির জন্যই এই বলিদান প্রথা ?যদি তাই হয় যাঁদের জন্য শ্রীপুরের এই মোষ বলিদান প্রথা শুরু হয়েছিল (রঘুনন্দন মিত্রমুস্তাফির জমিদারীর অনার্য ও আদিবাসী প্রজা ) তাঁরা তো কেউই আর মোষের মাংস খান না , তাহলে এই মোষ বলির যুক্তি কোথায় ?
ধর্মীয় অনুষ্টানে ঈশ্বরের সামনে বলি দেওয়া উচিৎ আমাদের কাম,ক্রোধ,লোভ ইত্যাদি পাশবিক প্রবৃত্তিগুলোকে, কিন্তু তার বদলে নিরীহ পশুদের হত্যা করি যা অমানবিক, নিষ্ঠুর এবং অবৈজ্ঞানিক চিন্তা করার ফসল।
অনেকের বিশ্বাস ঈশ্বর এর কাছে পশুবলি দিলে আমার ভালোও হবে বা মঙ্গল হবে , তাঁদের উদ্দেশ্যে বলি,নিজের বা পরিবারের ভালোর জন্য অন্য কাউকে বিপদে ঠেলে ফেলে দেওয়া, প্রয়োজনে মেরে ফেলা এই চিন্তা অমানবিক ,যা নরবলি থেকে পশুবলী সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সমাজবদ্ধ মানব প্রজাতির অগ্রগতির বিরোধী।
বেশ কয়েক বছর ধরে শ্ৰীমতী রীতা নন্দী ,শ্রী অনুপ প্রামানিক,শ্রী সৈকত রায় ও আরও বলাগড়ের কিছু কুসংস্কারমুক্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ রাসমেলায় পশুবলি বন্ধের পক্ষে গ্রামবাসীদের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফটো :- রীতা নন্দী
ফটো :-রীতা নন্দী সৌজন্যে |
হুগলী জেলার বলাগড় থানার শ্রীপুর গ্রামের রাস উৎসব হিন্দু ধর্মের শাক্ত,শৈব ও বৈষ্ণব ধারার মিলনক্ষত্র। আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগে রঘুনন্দন মিত্রমুস্তাফী নদীয়া জেলার উলা-বীরনগর থেকে এসে শ্রীপুরে জমিদারির পত্তন করেন। তিনি একটি গড়বিশিষ্ট এলাকায় প্রাসাদ,মন্দিররাজি,চণ্ডীমণ্ডপ ইত্যাদি গড়ে তোলেন।
রঘুনন্দন ছিলেন বৈষ্ণব, গড়ের চত্বরের মধ্যেজোড়াশিল্পের পঞ্চরত্ন মন্দির আছে,শিখরগুলি রেখ ধরণের খাঁজকাটা,আর সামনের ভাগের মাটির ফলকের ওপর উদ্ভিদধর্মী কারুকাজ।এ ছাড়া ওই গড় এলাকার মধ্যেই একটি আটচালা শিবমন্দির,দোলমঞ্চ ও রাধাগোবিন্দ মন্দির আছে। গড় এলাকার বাইরে রাস্তার ওপর একটি আটচালা শিবমন্দির,বিন্ধ্যাবাসিনী দেবীর পুজোরর দালান এবং একটি খিলানস্তম্ভে তৈরী রাসমঞ্চ আছে।
চণ্ডীমণ্ডপটির নির্মাণ সময় ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ। পঞ্চরত্ন মন্দিরটি ও অন্যান্য মন্দিরগুলি ঊনবিংশ শতকে নির্মিত। শ্রীপুরের গোবিন্দ মন্দিরটি একচূড়া বিশিষ্ট,১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে নিধিরাম মুস্তাফি এটি নির্মাণ করেন। আর মন্দিরের সামনের দোলমঞ্চটি ১৭৪৬ খ্রিস্টাব্দে রুদ্ররাম মুস্তাফি নির্মাণ করিয়েছিলেন।
রাস পূর্ণিমায় শ্রীপুর গ্রামে সপ্তাহব্যাপী চলে রাসমেলা ,বস্তুত এটাই গ্রামের মূল অনুষ্ঠান। আগেই বলছি এই মেলা শাক্ত বৈষ্ণব ও শৈব ধারার এক মিলনমেলা। একাধারে রাধাকৃষ্ণের রাস ,বিন্দুবাসিনী দেবীর পূজা ও বিন্দুবাসিনী দেবীর সাথে মহাদেবের বিবাহানুষ্ঠান এই সব মিলে মেলা জমজমাট।
এই উপলক্ষ্যে সারাদিন ধরে চলে যাত্রানুষ্ঠান,নাটক,আতশবাজির প্রদর্শনী আরও অনেক অনুষ্ঠান।
এত সুন্দর জমজমাট অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে একটি নৃশংস অধ্যায়, পশুবলি। দীর্ঘদিন ধরে এখানে ভেড়া ছাগল ও মোষবলির মত নৃশংস প্রথা চালু রয়েছে। আমার ধারণা সব ধর্মেই ধর্মের মোড়কে নৃশংসতা সৃষ্টি হয়েছিল একটা সাধু উদ্দেশ্য নিয়ে,(অবশ্য এটা আমার নিজস্ব ব্যাখ্যা,আমি পন্ডিত নই ,ধর্ম সম্পর্কে বিশেষ কিছু বুঝিও না , আমি আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে যতটুকু বুঝি,তাই বলার চেষ্টা করি ) একসময় বিরাট সংখক মানুষ আর্থিকভাবে অনুন্যত ছিল,রাজা বা ধনী মানুষের পৃষ্ঠপোষকতায় পশুদের বলি বা কুরবানী করে তার মাংস এই দরিদ্র শ্রেণীর বিতরণ করা হতো। শ্রীপুরে জমিদার রঘুনন্দনের ব্যাবস্থাপনায় তাঁর দরিদ্র প্রজাদের জন্য ভেড়া ও ছাগলবলি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রজাদের জন্য মোষ বলি প্রথা চালু করা হয়েছিল। রঘুনন্দন মিত্রমুস্তাফির সময় থেকে আমরা ৩০০ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে এসেছি , বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতিতে এত সুন্দর একটা অনুষ্ঠানে মোষ বলি বা পশুবলির মতো পৈশাচিক,মানবতা বিরোধী একটা প্রথা চালু রাখার কোনো যুক্তি আমি খুঁজে পাইনা।
অনেকের ধারনা আছে ধর্মীয় কারনে বলি দিলে মানসিক শক্তির বিকাশ হয়। অথচ পুজোর নাম নৃশংস এই প্রথা কোন ভাবেই মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে না। দুর্বল ও অবলা প্রানীদের যে নৃশংসতার সঙ্গে হত্যা করা হয় তাতে 'খুনি' মানসিকতার জন্ম হয়।মনোবিজ্ঞানীদের এবং মনোরোগ চিকিৎসকদের মতে বলির ভয়ানক দৃশ্য শিশুমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে। এর থেকে নানারকম মানসিক রোগ, ভীতি নিদ্রাহীনতা হাতে পারে।
মানুষের একমাত্র ধর্ম হলো মানবধর্ম, আর মানবধর্মের মূলকথাই হলো মানবতা(Humanity )।
ধর্মের নাম করে এই নৃশংসতা ,যা মানুষকে পীড়া দেয়, দৃশ্য দুষণ ঘটায় ও শিশুমনে বিকৃতির জন্ম দেয় , এমন কাজ কখনোই 'ধর্ম 'হতে পারে না। পাবলিক নুইসেন্স এক্ট (Public Nuisance Act) বা সংবিধানের ২৬ নং ধারা অনুযায়ী সব মানুষের দাবি হওয়া উচিত এই প্রথ বন্ধ করা।
অনেকের মানে প্রশ্ন জগতে পারে আমরা কি তাহলে মাংস খাবোনা ? বলি সংক্রান্ত আগের আমার একটি পোস্ট এ আমি বলেছিলাম পরিবেশের ইকোসিস্টেম অনুযায়ী পৃথিবীর নিয়মই হচ্ছে খাদ্য খাদকের ,তৃণভোজী মাংসাশী কেউই এই নিয়মের বাইরে নয় . এইক্ষেত্রে বলে রাখি একটি গাছ ও কিন্তু একটি প্রাণ . জীবনধারণের জন্য খাদ্য খাদকের সম্পর্ক আর ধর্মের নাম করে নৃসংশ প্রাণীহত্যা ,....... এই দুটোর প্রেক্ষিত আলাদা . যে কোনো ধর্মেরই মূল কথা হলো ,মানবতা,ত্যাগ,উদারতা ,সমবেদনা ,ইত্যাদি . এই নৃশংসতা কোনো ধর্মানুরাগ হতে পারে না ..........
ইকো-সিস্টেম অনুযায়ী , খাদ্য-খাদক সম্পর্কের ভিত্তিতে অবশ্যই আমরা মাংস খেতে পারি। আমরা মাংসের দোকান থেকে মাংস কিনে খাই আমাদের শরীরের চাহিদা মেটাবার জন্য।
বলি শব্দের প্রকৃত অর্থ পূজা-উপহার। এ ছাড়া প্রামান্য অভিধানে এর অর্থ আছে কর, উপহার ইত্যাদি। পশুবধ কথাটি পরবর্তীকালে এসেছে। 'বলি' শব্দের উত্পত্তি বল-ধাতু থেকে। অর্থ- জীবন, বেষ্টন, সমৃদ্ধি, দান। এ ছাড়া বল-ধাতুর যে হিংসা ও বধ অর্থ আছে, তার মানেও জীবন ও বৃদ্ধিতে যা' হানি আনে তাকে হিংসা করা, তাকে বধ করা।কিন্তু আমরা মানুষ, তাঁর সৃষ্ট শ্রেষ্ঠ জীব হয়েও প্রবৃত্তির তাড়নায় অনেকেই তাঁরই সৃষ্ট দুর্বল জীবকে হত্যা করে নিজের রসনাকে পরিতৃপ্ত করতে চাই। জগন্মাতার চরণে তাঁর সন্তানকেই বলি দিয়ে তাঁর পূজা করতে চাই। মা কি নিজ সন্তানের রক্ত পান করে পরিতৃপ্ত হন ? না, আমাদের রসনার পরিতৃপ্তির জন্যই এই বলিদান প্রথা ?যদি তাই হয় যাঁদের জন্য শ্রীপুরের এই মোষ বলিদান প্রথা শুরু হয়েছিল (রঘুনন্দন মিত্রমুস্তাফির জমিদারীর অনার্য ও আদিবাসী প্রজা ) তাঁরা তো কেউই আর মোষের মাংস খান না , তাহলে এই মোষ বলির যুক্তি কোথায় ?
ধর্মীয় অনুষ্টানে ঈশ্বরের সামনে বলি দেওয়া উচিৎ আমাদের কাম,ক্রোধ,লোভ ইত্যাদি পাশবিক প্রবৃত্তিগুলোকে, কিন্তু তার বদলে নিরীহ পশুদের হত্যা করি যা অমানবিক, নিষ্ঠুর এবং অবৈজ্ঞানিক চিন্তা করার ফসল।
অনেকের বিশ্বাস ঈশ্বর এর কাছে পশুবলি দিলে আমার ভালোও হবে বা মঙ্গল হবে , তাঁদের উদ্দেশ্যে বলি,নিজের বা পরিবারের ভালোর জন্য অন্য কাউকে বিপদে ঠেলে ফেলে দেওয়া, প্রয়োজনে মেরে ফেলা এই চিন্তা অমানবিক ,যা নরবলি থেকে পশুবলী সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সমাজবদ্ধ মানব প্রজাতির অগ্রগতির বিরোধী।
বেশ কয়েক বছর ধরে শ্ৰীমতী রীতা নন্দী ,শ্রী অনুপ প্রামানিক,শ্রী সৈকত রায় ও আরও বলাগড়ের কিছু কুসংস্কারমুক্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ রাসমেলায় পশুবলি বন্ধের পক্ষে গ্রামবাসীদের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নিঃসান্দেহে তাঁদের এই সামাজিক আন্দোলন (ধার্মিয় অনুষ্ঠানে পাশুবলির বিরুদ্ধে
আন্দোলন)সামাজিক সচেতনতা ও প্রশংসার দাবী রাখে। আসুন আমরা , আপনারা সবাই এই আন্দোলনের শরিক হই,বন্ধহোক এই নৃশংস প্রথা পশুবলি ।
যাঁরা রাসমেলায় পশুবলির পক্ষ্যে ৩০০ বছরের পরম্পরার যুক্তি দেখাচ্ছেন ,তাঁদের উদ্দেশ্যে বলি ,৩০০ বছর আগে বেশিরভাগ মানুষ পাতার কুটিরে বসবাস করত ,হেটে বা ঘোড়ায় চেপে যাতায়াত করত ,বাচ্ছাদের লেখাপড়া শেখানোর (বিশেষ করে মেয়েদের )প্রচলন ছিল না, টোল বা গুরুগৃহে পঠনপাঠন চলতো, আইন ও শাসনের ক্ষেত্রে রাজা বা জমিদারী ব্যাবস্থাই শেষ কথা ছিল ,ইত্যাদি ইত্যাদি,.........
তবে কি আগামী দিনে আমরা দেখতে পাব পরম্পরা মেনে শ্রীপুর গ্রামে লাইব্রেরি,স্কুল ,ইলেক্ট্রিসিটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, পাকা রাস্তা ভেঙে কাঁচা করে দেওয়া হয়েছে, বাচ্ছাদের স্কুল\কলেজ ছাড়িয়ে গ্রামের টোল এ ভর্তি করা হয়েছে, গ্রামের জমিদারী প্রথা ফিরিয়ে আনা হয়েছে,জমিদারবাবুর পৃষ্ঠপোষকতায় বিন্দুবাসিনী পুজোয় প্রচুর পশুবলি হচ্ছে এবং মোষ সহ সেইসব প্রসাদী মাংস সবাই কবজি ডুবিয়ে খেতে খেতে জমিয়দারবাবুর জয়ধ্বনি করছে,................ সারা পৃথিবী থেকে দলে দলে পর্যটক আসছে শ্রীপুর গ্রামে ৩০০ বছর আগের ভারতবৰ্ষের সামাজিক অবস্থাকে দেখতে,..............
আর তা যদি না হয় , তবে সমাজ ও সময়কে সম্মান জানিয়ে মোষ বলির মতো মধ্যযুগীয় প্রথার প্রতিবাদ জানান।
প্রসাদ বিতরণ ই যদি বলিদান প্রথার উদ্দেশ্য হয় তবে জ্যান্ত মোষ বা অন্যান্য পশুর বদলে আমরা সন্দেশ,ক্ষীর বা অন্যান্য পশুর প্রতিকৃতি বানিয়ে বিন্দুবাসিনীর সামনে বলি দেওয়া যেতেই পারে।
আর বিন্দুবাসিনী দেবীকে যদি রক্ত নিবেদন করতে হয়, নিরীহ পশুবলির বদলে আয়োজন করা যেতে পারে রক্তদান শিবিরের , এতে ধর্মাচরণ ও সমাজ-সচেতনতা দুইই সম্ভব।
আজ না হয় কাল পশুবলির মত নৃশংস প্রথা বন্ধ হবেই , আজ যাঁরা পশুবলির পক্ষে রয়েছেন,তাঁরা নিজেদের এবং সন্তান,সন্ততিদের কাছে লজ্জিত হবেন,..........
যাঁরা রাসমেলায় পশুবলির পক্ষ্যে ৩০০ বছরের পরম্পরার যুক্তি দেখাচ্ছেন ,তাঁদের উদ্দেশ্যে বলি ,৩০০ বছর আগে বেশিরভাগ মানুষ পাতার কুটিরে বসবাস করত ,হেটে বা ঘোড়ায় চেপে যাতায়াত করত ,বাচ্ছাদের লেখাপড়া শেখানোর (বিশেষ করে মেয়েদের )প্রচলন ছিল না, টোল বা গুরুগৃহে পঠনপাঠন চলতো, আইন ও শাসনের ক্ষেত্রে রাজা বা জমিদারী ব্যাবস্থাই শেষ কথা ছিল ,ইত্যাদি ইত্যাদি,.........
তবে কি আগামী দিনে আমরা দেখতে পাব পরম্পরা মেনে শ্রীপুর গ্রামে লাইব্রেরি,স্কুল ,ইলেক্ট্রিসিটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, পাকা রাস্তা ভেঙে কাঁচা করে দেওয়া হয়েছে, বাচ্ছাদের স্কুল\কলেজ ছাড়িয়ে গ্রামের টোল এ ভর্তি করা হয়েছে, গ্রামের জমিদারী প্রথা ফিরিয়ে আনা হয়েছে,জমিদারবাবুর পৃষ্ঠপোষকতায় বিন্দুবাসিনী পুজোয় প্রচুর পশুবলি হচ্ছে এবং মোষ সহ সেইসব প্রসাদী মাংস সবাই কবজি ডুবিয়ে খেতে খেতে জমিয়দারবাবুর জয়ধ্বনি করছে,................ সারা পৃথিবী থেকে দলে দলে পর্যটক আসছে শ্রীপুর গ্রামে ৩০০ বছর আগের ভারতবৰ্ষের সামাজিক অবস্থাকে দেখতে,..............
আর তা যদি না হয় , তবে সমাজ ও সময়কে সম্মান জানিয়ে মোষ বলির মতো মধ্যযুগীয় প্রথার প্রতিবাদ জানান।
প্রসাদ বিতরণ ই যদি বলিদান প্রথার উদ্দেশ্য হয় তবে জ্যান্ত মোষ বা অন্যান্য পশুর বদলে আমরা সন্দেশ,ক্ষীর বা অন্যান্য পশুর প্রতিকৃতি বানিয়ে বিন্দুবাসিনীর সামনে বলি দেওয়া যেতেই পারে।
আর বিন্দুবাসিনী দেবীকে যদি রক্ত নিবেদন করতে হয়, নিরীহ পশুবলির বদলে আয়োজন করা যেতে পারে রক্তদান শিবিরের , এতে ধর্মাচরণ ও সমাজ-সচেতনতা দুইই সম্ভব।
আজ না হয় কাল পশুবলির মত নৃশংস প্রথা বন্ধ হবেই , আজ যাঁরা পশুবলির পক্ষে রয়েছেন,তাঁরা নিজেদের এবং সন্তান,সন্ততিদের কাছে লজ্জিত হবেন,..........
" যে পূজার বেদী রক্তে গিয়েছে ভেসে
ভাঙো ভাঙো আজি ভাঙো তারে নিঃশেষে
ধর্মকারার প্রাচীরে বজ্র হানো ,
এ অভাগা দেশে জ্ঞানের আলোক আনো। "
--------রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তথ্য সহায়তা :- অধ্যাপক পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শ্রী অসীম রায় ফটো :- রীতা নন্দী